অপারেশন সিন্দুরের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বোমা ফেলেছেন যে পাকিস্তান ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষা চালাচ্ছে। ট্রাম্প এমনকি দাবি করেছেন যে এই পারমাণবিক পরীক্ষার কারণে মৃদু ভূমিকম্প হচ্ছে।
এটি লক্ষণীয় যে অপারেশন সিন্দুর চলাকালীন, ভারতীয় বিমান বাহিনী ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে পাকিস্তানের অন্তত তিনটি পারমাণবিক ঘাঁটি ধ্বংস করেছিল। ভারত পাকিস্তানের কিরানা হিলস (সারগোধা), নূর খান বিমান ঘাঁটি এবং রহিম ইয়ার খান ঘাঁটি আক্রমণ করে এবং 9-10 তারিখের রাতে ভারী বোমা হামলা চালায়।
পাকিস্তানের পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলিং ফাঁস
ভারতের এসব হামলায় পাকিস্তানের পারমাণবিক কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী ড নরেন্দ্র মোদি আর ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছিল, এই হামলার পর পাকিস্তানের পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলিংয়ের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। ভারতের এই দাবির মধ্যেই ট্রাম্পের বক্তব্যকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর দেশে ফিরে ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে চলমান পারমাণবিক পরীক্ষা নিয়ে একটি টিভি চ্যানেলে বড় ধরনের তথ্য দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া এবং পাকিস্তানের মতো দেশগুলো পারমাণবিক পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমেরিকাও ৩৩ বছর পর পরমাণু পরীক্ষা করতে যাচ্ছে।
পারমাণবিক পরীক্ষা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি
চ্যানেল অ্যাঙ্করের যুক্তিতে যে তারা (রাশিয়া, চীন ইত্যাদি) পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করছে এবং পারমাণবিক পরীক্ষা নয়, ট্রাম্প বলেছিলেন যে সমস্ত দেশ আমেরিকার মতো মুক্তমনা নয়। ট্রাম্পের মতে, এসব দেশে পারমাণবিক পরীক্ষার কোনো রিপোর্ট নেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন যে এই পরীক্ষাগুলি মাটির নীচে করা হয়, যার কারণে কেউ এটি সম্পর্কে অবগত নয়, তবে ট্রাম্প নিশ্চিতভাবে বলেছেন যে এই পরীক্ষাগুলির সময়, পৃথিবীতে সামান্য কম্পন (শক) অবশ্যই ঘটে।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে কম্পন
বিশেষ বিষয় হল অপারেশন সিন্দুর চলাকালীন পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে কয়েকদিন ধরে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। সে সময় পাকিস্তানের পারমাণবিক পরীক্ষার কারণে এসব কম্পন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হলেও কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অপারেশন সিঁদুর এর পর আমেরিকা ও পাকিস্তান খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। ট্রাম্পের আমন্ত্রণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং সেনাপ্রধান অসীম মুনির হোয়াইট হাউসে যান। এমতাবস্থায় মুনির বা শাহবাজ কেউই পারমাণবিক পরীক্ষার তথ্য ট্রাম্পকে দিয়েছেন বলে জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।
সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা প্রকাশ
সম্প্রতি, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি) এর একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা প্রকাশ করেছিলেন যে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র পরিচালনার জন্য আমেরিকা দায়ী। সিআইএ’র এই কর্মকর্তা বহু বছর ধরে পাকিস্তানে পদায়ন করছেন।
SIPRI (স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট) এর সর্বশেষ প্রতিবেদন (2025) অনুসারে, একটি বিশ্বব্যাপী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক যা বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্রের উপর নজর রাখে, পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে 170টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কাছে পাকিস্তানের চেয়ে সামান্য বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে অর্থাৎ 172।
বিশ্বব্যাপী 12,405টি পারমাণবিক অস্ত্র
2018 সালে, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেই, পরমাণু সাবমেরিন আইএনএস অরিহন্তের প্রথম টহল দেওয়ার সময়, জল, ভূমি এবং আকাশে পারমাণবিক ত্রয়ীতে দেশ পারমাণবিক শক্তি হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। SIPRI এর মতে, বর্তমানে বিশ্বে 12,405টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।
এর মধ্যে রাশিয়ার রিজার্ভের মধ্যে সর্বোচ্চ 5580টি রয়েছে। ৫৩২৮টি অস্ত্র নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আমেরিকা এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে চীন (৫০০)। ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের রয়েছে যথাক্রমে 225 এবং 290, যেখানে উত্তর কোরিয়ার 50 এবং ইসরায়েলের 90 রয়েছে।
আরও পড়ুন:- ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে পৌঁছাবে পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজ, প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত
