তুরকিয়ের রাজধানী ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে শান্তি আলোচনা আবারও কোনো ফল ছাড়াই শেষ হয়েছে। এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে চলমান সীমান্ত উত্তেজনা এবং তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) তৎপরতার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো, কিন্তু পাকিস্তানের কৌশলের কারণে আলোচনা ভেস্তে যায়। সূত্রের মতে, পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ডে প্রবেশ করার এবং টিটিপির আস্তানাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি চেয়েছিল, যার প্রতি কাবুল তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল তর্ক-বিতর্ক হয় এবং আলোচনার পরিবেশের অবনতি হয়।
আফগান পক্ষ পাকিস্তানকে আশ্বস্ত করেছিল যে তারা তাদের মাটি পাকিস্তানবিরোধী কার্যকলাপে ব্যবহার হতে দেবে না। বিনিময়ে, কাবুল ইসলামাবাদকে তার আকাশসীমা লঙ্ঘন বন্ধ করতে এবং আমেরিকান ড্রোনের ফ্লাইট বন্ধ করার দাবি জানায়। প্রথম দিকে পাকিস্তান রাজি বলে মনে হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ “অজানা কলের” পর তাদের অবস্থান বদলে যায়। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কলের পরে, পাকিস্তান প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে যে একটি বিদেশী দেশের সাথে ড্রোন ওড়ানোর চুক্তি রয়েছে (ইঙ্গিত আমেরিকান), যা বাতিল করা যাবে না।
আফগানিস্তান বৈঠক থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে
আফগানিস্তান এই প্রকাশকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে এবং বৈঠক থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। পাকিস্তানের এই মনোভাব তুর্কি ও কাতার উভয়ের জন্যই হতবাক, যারা এই আলোচনার মধ্যস্থতাকারী ছিল। এর পরে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ তার বিবৃতিতে আফগানিস্তানকে “পাকিস্তানের প্যান” হিসাবে বর্ণনা করে এবং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে পাকিস্তানে হামলা হলে, “পঞ্চাশ শতাংশ বেশি শক্তি দিয়ে” জবাব দেওয়া হবে।
আফগানিস্তান ভোঁতা জবাব দিয়েছে
আফগানিস্তানও কড়া জবাব দিয়েছে। এর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল মতিন কানি বলেছেন, “আমাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র নেই, তবে আফগানরা কখনো কারো সামনে মাথা নত করেনি। যা পাকিস্তানকে পাঠ শেখানোর জন্য যথেষ্ট।” আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মৌলভি মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদও বলেছেন যে “টিটিপি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। এর সদস্যরা পাকিস্তানি নাগরিক, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আফগানিস্তানের নেই।”
এভাবে আবারো সামনে এসেছে পাকিস্তানের ‘দ্বৈত নীতি’। একদিকে যেখানে শান্তির কথা বলছে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌমত্ব হরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইস্তাম্বুলে আলোচনা ভেঙ্গে যাওয়াকে ভারত, আমেরিকা, তুরকি ও কাতার সহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি বড় কূটনৈতিক আঘাত বলে মনে করা হচ্ছে।
এটিও পড়ুন-
পুতিন বা ট্রাম্প নয়, প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি থাকবেন এই দুই নেতা, ভারতের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত




