ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দশকের টানাপোড়েনের মূল কারণ শুধু সীমান্ত বিরোধ নয়, সন্ত্রাসবাদের ইস্যু। ভারত বারবার বলে আসছে যে যতক্ষণ না পাকিস্তান তার মাটি থেকে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলিকে আশ্রয় দিতে থাকবে, ততদিন স্বাভাবিক সম্পর্ক সম্ভব নয়। 2025 সালের মে মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত অপারেশন সিন্দুর ছিল এই নীতির একটি উদাহরণ। এই কর্ম পাহলগাম ধর্মীয় উপাসনালয়ে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় এটি করা হয়েছিল।
ভারতের আছে অপারেশন সিঁদুর এর মাধ্যমে এটি একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এর নীতি জিরো টলারেন্সের ভিত্তিতে। বরাবরের মতো, পাকিস্তান এই পদক্ষেপটিকে একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসাবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু একই সময়ে তার নেতাদের সন্ত্রাসীদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে দেখা গেছে, যার কারণে তার দ্বিগুণ মান আবারও উন্মোচিত হয়েছে।
পাকিস্তানি জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা:
ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে এবং ভারতীয় রাজনীতিকে সামরিকীকরণ করা হয়েছে, যা পাকিস্তানের কৌশলগত হাতের উপর জোর দিয়ে অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করেছে।
ভারত, যদিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক দক্ষিণ দেশ, আধিপত্যবাদ এবং সম্প্রসারণবাদকে লালন করে, জাতিসংঘের প্রস্তাবগুলিকে অস্বীকার করে এবং… pic.twitter.com/aArUCwhjs4
— সংঘর্ষ রিপোর্ট (@clashreport) 21 অক্টোবর, 2025
পাকিস্তানের পুরনো কৌশল
সম্প্রতি ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পাকিস্তানি জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা একটি বিবৃতি দিয়েছেন যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ নিরসনে তৃতীয় কোনো দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যস্থতা জরুরি। এই বক্তব্যে পাকিস্তানের সেই পুরনো চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটেছে, যেখানে প্রতিটি ইস্যুতে বহিরাগত শক্তির সমর্থন নেওয়ার মানসিকতা প্রতিফলিত হয়েছে। ভারত এতে স্পষ্টভাবে বলেছে যে ভারত ও পাকিস্তানের সমস্ত ইস্যু দ্বিপাক্ষিক এবং তৃতীয় কোনো পক্ষের কোনো ভূমিকা নেই। ভারতের এই অবস্থানটি 1972 সালের সিমলা চুক্তি এবং 1999 সালের লাহোর ঘোষণার উপর ভিত্তি করে, যেখানে উভয় দেশ শুধুমাত্র পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
পাকিস্তানের কূটনৈতিক বিভ্রান্তি ও দ্বন্দ্ব
জেনারেল মির্জা তার বক্তৃতায় ভারতকে একটি সাম্রাজ্যবাদী এবং আধিপত্যবাদী দেশ বলে অভিহিত করেছেন, কিন্তু এর মধ্যে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে ভারত আজ বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক শক্তি। তিনি অভিযোগ করেন যে ভারত জাতিসংঘের প্রস্তাব উপেক্ষা করে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। প্রকৃতপক্ষে, এই বিবৃতি পাকিস্তানের কূটনৈতিক হতাশা এবং হীনমন্যতা প্রতিফলিত করে। যে পাকিস্তান ভারতকে ট্রোজান হর্স বলে, তারা ভুলে যায় যে তার নিজস্ব পরিচয় এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদে মদদদাতা দেশে পরিণত হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর রাজনীতিকরণ, পাকিস্তানের আত্মবিরোধিতা
জেনারেল মির্জা তার বক্তৃতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবে কাজ করার অভিযোগ করেন। তবে তার বক্তব্য পাকিস্তানের বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে মজা করার মতো, কারণ পাকিস্তান এমন একটি দেশ যেখানে সেনাবাহিনী রাজনীতি এবং শাসন উভয়ই নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে গণতান্ত্রিক সরকারগুলো কয়েকবার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটে ইমরান খাননওয়াজ শরিফের মতো নির্বাচিত নেতাদের সেনাবাহিনীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার অপরাধে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
ভারতের বৈশ্বিক অবস্থান এবং পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা
আজ ভারত শুধুমাত্র এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়, G-20, BRICS এবং জাতিসংঘের মত ফোরামেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ভারতকে এখন বৈশ্বিক নীতি-নির্ধারক হিসেবে দেখা হচ্ছে, যিনি গ্লোবাল সাউথের স্বার্থের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। পাকিস্তানের উদ্বেগ হল ভারত এখন আর শুধু দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছে যার কথা বিশ্ব শোনে। এই কারণেই পাকিস্তান বারবার তৃতীয় পক্ষের ইস্যু তুলে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা করে।



